সময়ের গল্প
সুমাইয়া তাসনিম
মাঝে মাঝে মনে হয় পরিচিত সময়গুলো হারিয়ে ফেলছি।
পাশ কাটিয়ে যাওয়া কেউ,
হুট করেই মনে হয় ওই চোখ দু’টো পরিচিত...
অনেক পায়ের ছন্দ আমার চেনা মনে হয় খুব...
চলতি পথে থমকে দাঁড়াতে হলে শহুরে পথের ব্যস্ত রঙের বহর দেখি।
অত রঙের ভীড়েও সামনে দাঁড়ানো লাইটপোস্টের ক্লান্ত হলুদ রঙ কেন আপন মনে হয় বুঝে পাইনা।
সহসাই মনে হয় সে-ই তো কেবল আলগোছে বুঝে নিয়েছে কি তীব্রভাবে প্রতিনিয়ত আমি গোপন করতে চেয়েছি নিজেকে...!
নিজের ম্লান আলোর বিমূর্ত শব্দময়তায় আড়াল করে নিয়েছে আমার সমস্ত রঙ।
কেউ কি জানতো, কত প্রচন্ড ছেলেমানুষি ব্যাকুলতা আমার ভেতরে ঘর করেছে দিনের পর দিন?
কত তীব্রভাবে বিলীন হয়ে যেতে চাইতাম অসীমে?
কোনো একদিন বিলীন হবো_ এ অনিবার্য সত্যকে কত বর্ণে চোখের পাতায় রেখেছি ভীষণ যত্নে;
অতটা কি পড়া যেতো চোখের তারার ভীরু বৃত্তের সংকোচে!
এভাবে বেঁচেছি একটা কৈশোর।
লাগামছাড়া কৌতুহলে মানুষকে বুঝেছি একেকটা নিঝুম-গহীন হৃদের মত।
কারো কারো অস্তিত্ব ছোঁয়া গেলে শুদ্ধ হওয় যায়।
আর কেউ! পার্মানেন্ট মার্কার।
হাঃ হাঃ হাঃ......
দাগ রেখে যায়।
অবাঞ্চিত সময়ের চিহ্ন রেখে যায়।
ইতস্তত দৃষ্টিতে একমুঠো অন্তঃসার শূন্যতা রেখে যায়।
এভাবে সময়ের বেলা বাড়ে।
সময়ের সাথে আমার তবু সখ্য হয়না আর কোনোদিনও।
অসমাপ্ত কথারা ছিড়ে যাওয়া মালার পাথরকণাদের মত একেকটি বিচ্ছিন্ন নক্ষত্রের মত হৃদয়ের বালুচরে সংসার পেতে থাকে।
শূন্যতায়-ব্যস্ততায়, নৈঃশব্দে-কোলাহলে জানান দেয়, “আমি আছি”।
‘আমি তোমার দেখা সেই শরতের বিকেল,
যার কাছে তুমি আকাশ দেখতে শিখেছিলে।
আমি সেই সন্ধ্যার আবীর,
যার কাছে জেনেছিলে ঝরাপাতার নিঃসীম নিঃসঙ্গতা...
আমি সেই ঘর পালানো অভিমানী মেঘ,
তোমার হাতের রেখায় মুক্তির পথ খুঁজেছিলো যে।’
ব্যস্ত কথার রাশ টেনে আচম্বিতে ব্যস্ত দুপুর থমকে দিয়ে এমন করে ফিরে আসে আমার হতচ্ছাড়া কৈশোর।।
আমি মেঘের মন বুঝিনা।
চোখের দেখায় আমি কোনো ফুলের রঙ বুঝিনা।
আমার ভেতরে কথা কয় যে,
তার কাছে আমার আজন্ম আড়াল খোঁজা।
আমাকে আমার হারানো জ্বোনাক সখার ঠিকানা পাঠাও,
আমি বিবর্ণ আঠারোর আগল খুলে অসম্পূর্ণ শেষকৃত্যের গল্প বলতে চাই।
এভাবে পুড়েছে প্রতিটি সকাল যে, সে অঙ্গার; রাত্রির সমস্ত কৃষ্ণপক্ষ ধারণ করেছে শেষপর্যন্ত।
কি নিবিড় নিপুণতায় একই খোলসে লালন করেছি বিপুল বৈপরীত্য!
অনেক ইচ্ছেদের তাড়িয়ে দিয়ে নাগরিক বোধের শাসন মাথা পেতে মেনে নিয়েছি বড় হবো বলে।
অথচ সময়ের ধাঁধা মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে চীরকাল...
সংসারের চাতুর্যকে মাধুর্য ভেবে ভ্রম হয়।
বয়েস আটকে আছে সেই শীতের রাতের ক’ফোটা শিশিরে,
অথচ আমি বড় হতে চেয়েছি...।