কালো চোখের কাসিদা
আল মাহমুদ
ভোরের নদীর মতো মনে হয় তোমাকে কখনো,
কখনো বা সন্ধ্যার নদী, আবছা ছায়ার নিচে
দূর গ্রামে সূর্য ডুবে যায়
পড়ন্ত আলোর মধ্যে প্রকৃতির রহস্যে জড়ানো
আমি দেখি সেই মুখ নত আরও-নত প্রার্থনায়।
ঠাণ্ডা জায়নামাজের বুটিতোলা পবিত্র নকশায়
একটি আরশোলা হাঁটে। এ কার আত্মা, কার প্রাণ?
নাকি কোন মুরতাদ জিন লাঞ্ছনার খাদ্য খুটে খায়
আর শুকনো কাপড়ে দেখে অগ্নিশিখা, নিজেরই সমান।
তোমার সিজদা দেখে এ ঘরের পায়রা ডেকে ওঠে
গম্বুজের ভেতরে যেন দম পায় সুপ্ত এক দরবেশের ছাতি,
কি শীতল শ্বাস পড়ে। শান্ত শামাদানের সম্পুটে
বাতাসের ফুঁয়ে যেন নিভে গেল ফজরের মগ্ন মোমবাতি।
তুমি কি শুনতে পাও অন্য এক মিনারে আজান?
কলবের ভিতর থেকে ডাক দেয়, নিদ্রা নয়, নিদ্রা নয়, প্রেম
সমুদ্রে খলিয়ে অজু বসে থাকে কবি এক বিষণ্ণ, নাদান।
সবারই আরজি শেষ। বাকি এই বঞ্চিত আলেম।
আমার তসবী শুনে হয়তো বা দ্রব হন তিনি
যার হাতে অদৃষ্টের অনিবার্য অদৃশ্য কলম,
কবিরও ভাগ্যের লিপি স্মিতহাস্যে লিখে যান তিনি
অদেখা ক্ষতের দাহে মেখে দেন আশার মলম।
তোমার সালাত শেষে যে দিকেই ফেরাও সালাম
বামে বা দক্ষিণে, আমি ও মুখেরই হাসির পিয়াসী;
এখনও তোমার ওষ্ঠে লেগে আছে আল্লাহ্র কালাম
খোদার দোহাই বলো ও ঠোঁটেই, 'আমি ভালোবাসি।'
প্রভুর বিতান থেকে প্রেম আসে আদমের আত্মা হয়ে, নারী
পেরিয়ে নক্ষত্রপুঞ্জ, ছায়াপথ, আণবিক মেঘের কুণ্ডল,
চুইয়ে প্রাণের রস গ্রহে গ্রহে কুয়াশা সঞ্চারি
কবির চোখের মধ্যে হয়ে যায় একবিন্দু জল।
আমার রোদনে জেনো জন্ম নেয় সর্বলোকে ক্ষমা
আরশে ছড়িয়ে পড়ে আলো হয়ে আল্লাহ্র রহম,
পৃথিবীতে বৃষ্টি নামে, শষ্পে ফুল; জানো কি পরমা
আমার কবিতা শুধু অই দুটি চোখের কসম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন