শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

শেষ দশ রাত, শেষ আশা



রমাদানের শেষ দশ রাতের জন্য কিছু অসাধারণ কিছু টিপসঃ


১। আপনি এ পর্যন্ত যা করেছেন এই শেষ দশদিনে তার প্রভাব ফেলতে দেবেন না। আজ অথবা সামনের কোনোদিনেই হয়তো আপনার জন্য ক্ষমা অপেক্ষা করছে। এখনো সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। আপনি যদি সত্যিই মনে করে থাকেন যে বিগত দিনগুলোতে আপনি আরো অনেককিছু করতে পারতেন তাহলে বাকি এই দিনগুলোতে নিজের সর্বোচ্চটুকু দেয়ার জন্য প্রস্তুত হোন। শুদ্ধ, ইতিবাচক নিয়ত নিয়ে আবার শুরু করুন।

২। আজই একটু সময় নিয়ে সূরা ক্বাদর-এর তাফসীর পড়ুন আর এ রাতে আসলেই কী হয়েছিল তা উপলব্ধির চেষ্টা করুন। আপনি এর প্রবলতা আর মাহাত্ম্য আরো তীব্রভাবে অনুভব করবেন।
 
৩। নিজের পুরো চেষ্টা দেয়ার জন্যে ২৭ রমাদানের অপেক্ষায় বসে থাকবেন না। শেষ দশ রাতের পুরোটাই আপনার লক্ষ্য হবে। ভেবে দেখুন তো, আপনি কি ভুলেও লাইলাতুল ক্বাদর হাতছাড়া করতে চান?


৪। কোন প্রকার বিদ'আত বা অনুষ্ঠানে জড়িয়ে পড়বেন না যা হয়তো কিছু মসজিদ বা সংস্কৃতি প্রচার করতে চায়। সুন্নাহকে অনুসরণ করুন! " যে ব্যক্তি ক্বদর-এর রাতে তাঁর ঈমানের কারণে আর পুরষ্কারের আশায় নামাযে দাঁড়ায়, তাঁর পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে ",এই বলেই নবী (সাঃ) আমাদের সহজভাবে পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।


 ৫। রাসূল (সাঃ) এর শিখিয়ে যাওয়া দু'আ মুখস্থ করুন ও পড়তে থাকুন।

اَللَّهُمَّ اِنَّكَ عَفُوٌّ ، تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي 

অর্থঃ "হে আল্লাহ, তুমি ক্ষমাশীল আর ক্ষমাকে পছন্দ কর; তাই আমাকে ক্ষমা করো।

৬।দু'আর জন্য একটি ছোট তালিকা বানান। মনে রাখবেন আল্লাহর বান্দার জন্য এটি সবচেয়ে সুন্দর সময়। ক্বদর-এর রাত, ভাগ্যের রাত! সচেতনভাবে সেসব বিষয় বাছাই করুন যা আপনি এই দুনিয়া, আপনার দ্বীন, পরিবার আর আপনার আখিরাতের জন্য চান। পৃথিবী জুড়ে আমাদের যেসব ভাইবোনেরা কঠিন কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তাদেরকেও দু'আতে যোগ করতে ভুলবেন না।

 ৭। সম্ভব হলে  দিনের বেলা একটু করে ঘুমিয়ে নিন। পেটকে হাল্কা রাখুন। ঈশার নামায শেষ হবার পরপরই ঘুমিয়ে পড়ুন; দেরি করবেন না। একটু ঘুমানোর পর নিজেকে চাঙ্গা করুন এবং ইবাদাতের জন্য প্রস্তুতি নিন।

৮। নিজের পরিবারকে অবহেলা করবেন না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ রাতগুলোতে তাঁর স্ত্রীদেরকে জাগিয়ে দিতেন! আর হ্যাঁ, আপনার বাচ্চাদেরও রাতের কিছু সময় জাগ্রত রাখুন। যদি তাঁদের ভিডিও গেমস খেলতে বা টিভি দেখতে দেয়া হয়, তাহলে তারাও অন্তত কিছু সময় জেগে থাকতে আগ্রহ পাবে। তাঁদের প্রস্তুত করুন, উদ্দীপনা যোগান; তাঁদের জন্যেও কিছু কাজের পরিকল্পনা করুন!

৯।   আপনি যেভাবে পোশাক ও অনান্য জিনিস দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেন তা আপনার মানসিকতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। নিজের সবচেয়ে সুন্দর পোশাকটি পরুন, সুগন্ধি লাগান। এ রাতের শক্তি, মহিমা অনুভব করুন।
 
১০। মসজিদ বা বাসাতে এমন একটি জায়গা বেছে নিন যেখানে শান্তি আর নীরবতা আছে। মুসহাফ, জায়নামাজ আর পানি হাতের কাছে রাখুন যাতে একটু পরপর এটাওটার জন্যে ওঠা না লাগে।

১১। এই রাত কত সুন্দর, আপনার কেমন লাগছে, আপনি আল্লাহ্‌র ইবাদাত করছেন এসব নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া বা ছবি টুইট করার জন্য এ রাত নয়। এগুলো আপনার প্রভু এবং নিজের মধ্যেই গোপন রাখুন। তাই আপনার ফোন, ওয়াইফাই, ল্যাপটপ আর কম্পিউটারগুলো বন্ধ রাখুন। এই দুনিয়ার সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহর সাথে সংযোগ তৈরি করুন।


১২। ঘুম ঘুম ভাব চলে আসলে ইবাদাতের ধরণ বদলান। ক্বিয়ামে বিরতি দিয়ে হৃদয় থেকে দু'আ করুন, কুরআন পাঠ করুন। লেকচার বা তিলাওয়াত শুনে সময় পার করবেন না। অথবা শুনলে অল্প সময়ের জন্য শুনুন যখন আপনার ঘুম আসছে মনে হবে।

১৩। ধৈর্যই মূল চাবি। শেষ ১০ দিন ক্লান্তিময় মনে হতে পারে। আপনার এখন হয়তো স্কুল চলছে বা অন্য কাজ আছে। এটিই সব কষ্ট বয়ে চলার এবং ধৈর্যে অটল থাকার সময়। ভেবে দেখুন আল্লাহ আপনাকে কত অসাধারণ সুযোগ দিয়েছেন যা হয়তো আপনার জীবনে আর কখনো না-ও আসতে পারে। আপনি যদি আগে থেকেই নিশ্চিতভাবে জানতে পারতেন যে এটাই আপনার জীবনের শেষ রমাদান, আপনি যদি জানতে পারতেন যে জান্নাত হাতের একদম কাছেই ছিল, যত কঠিনই হোক,আপনি কি এর জন্য ছুটে যেতেন না?

১৪। এটি গুরুত্বপূর্ণঃ আল্লাহ্‌র কাছ থেকে ভালো কিছু পাওয়ার আশা রাখুন। যখন আপনি কিছু চাইবেন, মনে রাখবেন যে আপনি সবচেয়ে উদার সত্ত্বার কাছে চাইছেন। আপনি যদি সবচেয়ে ভালোটা আশা করেন, তাহলে তিনি আপনাকে সবচেয়ে ভালোটাই দেবেন। তাঁর কাছে সংকোচ করবেন না। তাঁর প্রতি ভরসা রাখুন, নিজের হৃদয়কে তাঁর কাছে তুলে ধরুন। কোন সংকোচ, কোন বাধা, কোন খারাপ চিন্তাকে পরম করুনাময় ও দয়াবানের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে দেবেন না।

[শাইখ তাওফিক চৌধুরীর পেজ থেকে সংগৃহীত ও অনূদিত ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন